চাইলেই পুলিশ আপনাকে গ্রেফতার করতে পাড়বে না । ২০১৬ এর এক যুগান্তকারী হাইকোর্টের রুল



অনেক বৎসর থেকেই ৫৪ ধারার অপ ব্যাবহার এর বিভিন্ন ঘটনা এবং নাগরিক অধিকার সুরক্ষায় হাইকোর্টের এক যুগান্তকারী রায় এর মাধ্যমে বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলায় রক্ষা বাহিনীকে আরো জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আশা হয়েছে ।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রায় দেয়।

এর ফলে ৫৪ ধারা ও ১৬৭ ধারা নিয়ে হাই কোর্টের দেওয়া নির্দেশনা বহাল এবং তা মানায় সরকারের বাধ্যবাধকতা থাকছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

  এখন থেকে যে কোন পুলিশি গ্রেফতারের আগে পুলিশের কাছ থেকে পরিচয়পত্র এবং  ওয়ারেন্ট দেখার অধিকার রাখেন নাগরিক রা।

যে কোন বেআইনি কর্মকাণ্ডে হাতে নাতে ধরা পড়া  ব্যাতিত সম্পূর্ণ সন্ধেহর ভিত্তিতে  পুলিশ চাইলেই কাউকে গ্রেফতার করতে পাড়বে না ।

হাইকোর্টের নির্দেশনা ঃ

ক. আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেওয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে পারবে না।
  • খ. কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে।
    গ. গ্রেপ্তারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে কারণ জানাতে হবে।
    ঘ. বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেপ্তার ব্যক্তির নিকট আত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে বিষয়টি জানাতে হবে।
    ঙ. গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে তার পছন্দ অনুযায়ী আইনজীবী ও আত্মীয়দের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে।
    চ. গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে কারাগারের ভেতরে কাচের তৈরি বিশেষ কক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। ওই কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকট আত্মীয় থাকতে পারবেন।
    ছ. জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে।
    ট. পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল বোর্ড গঠন করবে। বোর্ড যদি বলে ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা নেবেন এবং তাকে দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে।


ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা অনুযায়ী কোনো পুলিশ সদস্য যদি কাউকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করে, কিংবা ১৬৭ ধারায় রিমান্ডে নেয়, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যব্স্থা নেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এ কথা জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে এ কথা বলেন।

আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগ বহাল রেখেছেন। কাজেই উচ্চ আদালতের রায় আমাদের জন্য মানা বাধ্যতামূলক। উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন তা আমি শুনেছি। এখনো রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি হাতে পাইনি। রায়ের কপি পেলে কী কী নির্দেশনা আছে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আজ সকালে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ড বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনা বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।






রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, “সব সময় আগে থেকে মামলা করে ধরা সম্ভব হয় না। অপেক্ষা করে বসে থাকলে তো সে পালাবে। যেমন যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার গ্রেপ্তারের নির্দেশ শুনে পালিয়েছে।... এগুলো জেনারালাইজ করা যাবে না। একেকটা ঘটনায় একেক রকম পদক্ষেপ নিতে হয়। তবে যাই হোক না কেন, আদালতের নির্দেশের আলোকেই নিতে হবে। আশা করি আদালতও বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করবে।”

মাহবুবে আলমের বিশ্বাস, নিজেদের পরিচয় না দিয়ে আইন-শৃংখলা বাহিনী কাউকে কখনো গ্রেপ্তার করতে যায় না।

“এখন দেখা যাচ্ছে এক জনকে শক্রুতা বশত গায়েব করে ফেলছে, পরিচয় দিচ্ছে আইন শৃংখলা-বাহিনীর লোক। আশা করি এটা বন্ধ হবে। সাদা পোশাকে যারা করবে তাদের কাজ হবে আসামিকে অনুসরণ করা, গতিবিধি লক্ষ্য করা; তাকে গ্রেপ্তার করার সময় নিশ্চই পরিচয় দেওয়া উচিত।”

অন্যদিকে ব্যারিস্টার সারা হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন- বাহাত্তরের সংবিধানপরবর্তী সময়ে আমাদের পুরনো আইনগুলো কীভাবে ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ করা হবে সেটা আমরা এই রায়ের মাধ্যমে পেয়েছি।

“বাহাত্তরের সংবিধানে আমাদের গ্রেপ্তার ও আটকাদেশের বিষয়ে কিছু রক্ষাকবচের ব্যবস্থা ছিল। আইনজীবীর সহযোগিতা পাবার অধিকার, আমরা যখন গ্রেপ্তার হই বা আমাদের যখন আটকাদেশ দেওয়া হয় আমাদেরকে কোর্টের সামনে সোপর্দ করতে হবে। ৩৬ ধারায় বলা হয়েছে হেফাজতে যে কোনো ধরনের নির্যাতন একেবারে নিষিদ্ধ। যে কোনো ধরনের অমানবিক সাজা নিষিদ্ধ। এই দুটি ধারার পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা আমরা আশা করছি রায়ের মাধ্যমে পাব।”


এই যুগান্তকারী রায়ের মাধ্যমে রাগরিক অধিকার রক্ষায় আরেকটু এগিয়ে গেল বাংলাদেশ । প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বের এই রুলের মাধ্যমে  নাগরিক রা ফিরে পেল তাদের সাংবিধানিক অধিকার ।






Comments

Popular posts from this blog

Depop, Vinted and other apps to share info with tax body

Scams impersonating financial regulator double